কাতারভিত্তিক সংবাদমাধ্যম আল-জাজিরায় সম্প্রতি বাংলাদেশ বিষয়ে প্রচারিত প্রতিবেদন নিয়ে সরকার উদ্বিগ্ন নয় বলে জানিয়েছেন তথ্যমন্ত্রী ও আওয়ামী লীগের যুগ্ম সাধারণ সম্পাদক ড. হাছান মাহমুদ। আল-জাজিরার বিরুদ্ধে সরকারের পক্ষ থেকে আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত এখনও হয়নি বলেও জানান তিনি। মঙ্গলবার দুপুরে সচিবালয়ে নিজ মন্ত্রণালয়ের সভাকক্ষে সমসাময়িক বিষয়ে সাংবাদিকদের সঙ্গে মতবিনিময়কালে এ কথা বলেন মন্ত্রী।
আল-জাজিরার বিরুদ্ধে কোনো আইনি ব্যবস্থা নেওয়া হবে কি না, জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, সরকারের পক্ষ থেকে এখনও আইনি ব্যবস্থা নেওয়ার সিদ্ধান্ত হয়নি। তবে কোনো সংক্ষুব্ধ ব্যক্তি যদি হাইকোর্টে যান বা আদালতে যান, সে ক্ষেত্রে আদালত থেকে যদি কোনো নির্দেশনা পাই, তা হলে সে নির্দেশনা অবশ্যই আমরা পালন করব। বিএনপিকে উদ্দেশ করে মন্ত্রী বলেন, আল-জাজিরার একটি প্রতিবেদন নিয়ে তারা নাচানাচি করছে। এতে কোনো লাভ হচ্ছে না। এ নিয়ে আমরা মোটেও উদ্বিগ্ন নই।
বিএনপির সিনিয়র যুগ্ম মহাসচিব রুহুল কবির রিজভী সম্প্রতি বলেছেন, আল-জাজিরায় প্রতিবেদন প্রকাশের পর সরকার দিল্লির সঙ্গে যোগাযোগ বাড়িয়ে দিয়েছে। জনগণ সঙ্গে না থাকলে দিল্লি দৌড়ে লাভ হবে না। বিষয়টিকে আপনি কীভাবে নিচ্ছেনÑ সাংবাদিকদের এমন প্রশ্নের জবাবে ড. হাছান মাহমুদ বলেন, ‘রিজভী সাহেব মাঝেমধ্যে কিছু উদ্ভট কথা বলেন। তার চিরাচরিত উদ্ভট কথার মধ্যে এটিও একটি।’ তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমাদের সঙ্গে ভারতের সুসম্পর্ক বহুদিনের। আমাদের প্রধানমন্ত্রীর নেতৃত্বে সেই সম্পর্ক নতুন উচ্চতায় উন্নীত হয়েছে।
তথ্যমন্ত্রী বলেন, আল-জাজিরা যে রিপোর্ট করেছে, সেটির শিরোনামের সঙ্গে ভেতরের বিষয়বস্তুর কোনো সম্পর্ক নেই। শিরোনাম দেওয়া হয়েছে ‘অল আর দ্য প্রাইম মিনিস্টার্স মেন’। আর ভেতরের প্রতিবেদন সেনাপ্রধান ও তার পরিবারের বিরুদ্ধে। রিপোর্টটি দেখে মনে হয়েছে, এটি ব্যক্তিগত আক্রোশবশত করা হয়েছে। ব্যক্তিগত আক্রোশবশত রিপোর্ট করায় কিন্তু বাংলাদেশে আল-জাজিরার গ্রহণযোগ্যতা কমেছে। বিশ^ব্যাপী আল-জাজিরার প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। তিনি বলেন, তাদের নিরপেক্ষতা-বস্তুনিষ্ঠতা, একই সঙ্গে তাদের রাজনৈতিক উদ্দেশ্যপ্রণোদিত রিপোর্ট নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। বহু দেশে আল-জাজিরার সম্প্রচার বন্ধ আছে। এমনকি ভারতসহ এখনও অনেক দেশে বন্ধ। তাদের গ্রহণযোগ্যতা ও বিশ^াসযোগ্যতা প্রচÐভাবে লোপ পেয়ে তলানিতে গিয়ে ঠেকেছে।
প্রতিবেদন নিয়ে প্রশ্ন ওঠার পরও আল-জাজিরার বিরুদ্ধে কেন ব্যবস্থা নিচ্ছেন না জানতে চাইলে তথ্যমন্ত্রী বলেন, আমরা কিন্তু ব্যবস্থা নিতে পারতাম। অন্যান্য দেশে যেভাবে টিভি চ্যানেল বন্ধ করা হয়, আমাদের দেশে আমরা চাইলে সেভাবে বন্ধ করতে পারতাম। আমরা বন্ধ করিনি। কারণ আমরা গণমাধ্যমের অবাধ স্বাধীনতায় বিশ^াস করি। কিন্তু অবাধ স্বাধীনতায় বিশ^াস করলেও সব গণমাধ্যমের নিজস্ব একটি দায়িত্ব থাকে। আল-জাজিরা এ ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালনে ব্যর্থ হয়েছে। তারা একটি পক্ষের হয়ে এ কাজ করেছে। সেনাপ্রধানকে টার্গেট করে সরকারের সমালোচনা করার অপচেষ্টা চালিয়েছে। অথচ রিপোর্টের সঙ্গে সরকারের কোনো সংশ্লিষ্টতা নেই বা প্রধানমন্ত্রীর কোনো সংশ্লিষ্টতা কোনোভাবেই নেই।
আল-জাজিরার প্রতিবেদনের পেছনে ডেভিড বার্গম্যান আছেন জানিয়ে তথ্যমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধ ট্রাইব্যুনালে ডেভিড বার্গম্যানের বিরুদ্ধে বিচার চলছিল। তিনি হাইকোর্টে নিঃশর্ত ক্ষমা চেয়েছেন, এরপর তিনি দেশ ত্যাগ করে চলে গেছেন। ড. হাছান মাহমুদ আরও বলেন, প্রতিবেদনের যে মূল বক্তা মি. সামি, তার অনেক নাম আছে। খালেদা জিয়ার যেমন অনেক জন্মদিন আছে, এখানে যিনি মূল বক্তা তারও অনেক নাম রয়েছে। তার যে ফিরিস্তি শুনলাম সেটি আমি আগে জানতাম না। এ রিপোর্ট হওয়ার পর তার ফিরিস্তি বের হয়ে আসছে। কখন তাকে তার পিতা ত্যাজ্যপুত্র করেছেন, কখন তিনি চুরিতে ধরা পড়েছেন, কখন তিনি কী করেছেন সেসব বিষয় বেরিয়ে আসছে। এ ধরনের লোকদের নিয়ে যখন রিপোর্ট তৈরি করা হয় তখন তো সেই গণমাধ্যমেরই ক্ষতি হয়, যেটি আল-জাজিরার ক্ষেত্রে হয়েছে।