দলের সঙ্গে একাডেমি মাঠে যখন এলেন, ততক্ষণে সকাল পেরিয়ে গেছে। ভরদুপুর তখন, মধ্যগগনে থাকা সূর্যটা তাপ ছড়াচ্ছিল বেশ। এমন রদ্দুরেই কিছুক্ষণ গা গরম করলেন, দৌড়ালেন, স্ট্রেচিং করলেন। এরপর প্যাড আর হেলমেট পরে ঢুকে গেলেন নেটে। অনেকটা সময় নিয়ে করলেন ব্যাটিং অনুশীলন, বোলিংয়েও হাত পাকালেন কিছুক্ষণ। এক বছরের নিষেধাজ্ঞা কাটিয়ে প্রতিযোগিতামূলক ক্রিকেটে ফেরার শেষ প্রস্তুতিটা সাকিব আল হাসান সারলেন চোখে-মুখে তৃপ্তির ঝলক ফুটিয়ে।
নিষেধাজ্ঞা থেকে মুক্ত হয়ে ক্রিকেটে ফেরার অধিকার সাকিব পেয়েছেন চলতি বছরের ২৯ অক্টোবর। এরপর তিন সপ্তাহ পেরিয়ে গেছে, এই সময়ের মধ্যে দেশে ফিরে নিয়মিত অনুশীলনে নিজেকে ময়দানি লড়াইয়ের জন্য প্রস্তুত করেছেন সময়ের অন্যতম সেরা অলরাউন্ডার। তিনি নিজেকে কতটা প্রস্তুত করতে পেরেছেন, সেটা দেখা যাবে আজ, সন্ধ্যায় যখন বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে সাকিবের দল জেমকন খুলনা মুখোমুখি হবে তামিম ইকবালের ফরচুন বরিশালের।
পাঁচ দলের টুর্নামেন্টটির পর্দা উঠতে যাচ্ছে আজই, মিরপুর শেরেবাংলা স্টেডিয়ামে উদ্বোধন ম্যাচে দুপুর দেড়টায় মুশফিকুর রহিমের বেক্সিমকো ঢাকার বিপক্ষে লড়বে নাজমুল হোসেন শান্তর মিনিস্টার গ্রুপ রাজশাহী। তবে বলার অপেক্ষা রাখে নাÑ এই ম্যাচে নয়, সবার নজর থাকবে সন্ধ্যা সাড়ে ৬টায় শুরু হতে যাওয়া খুলনা-বরিশাল ম্যাচে। সেটা যে সাকিবের ফেরার ম্যাচ। দেশের মাটিতে এই তারকা অলরাউন্ডার খেলতে নামবেন ১৪ মাসেরও বেশি সময় পর।
সাকিবকে সবশেষ দেখা গিয়েছিল চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে, গত বছরের ২১ সেপ্টেম্বর আফগানিস্তানের বিপক্ষে। ওই ম্যাচের পর তিনি পাড়ি জমিয়েছিলেন ক্যারিবীয় দ্বীপপুঞ্জে, সিপিএল খেলতে। ১২ অক্টোবর ওই আসরে নিজের শেষ ম্যাচটি খেলেছিলেন, এরপর ফিরে আসেন দেশে। ওই অক্টোবরের বাকি দিনগুলোতে বাংলাদেশের ক্রিকেট ছিল উত্তাল। দাবি আদায়ে সাকিবের নেতৃত্বেই ক্রিকেটাররা ডেকেছিলেন ধর্মঘট, ২৯ অক্টোবর সেই সাকিবই আইসিসির নিষেধাজ্ঞার খড়গে কাটা পড়ে এক বছরের জন্য হারিয়ে গেলেন ক্রিকেট থেকে।
হারিয়ে যাওয়া সাকিব ফিরে এসেছেন আবার। তার সেই ফেরাটা পূর্ণতা পেতে যাচ্ছে আজ। সাকিবের জন্য এ বড় সুখের দিন, আনন্দের দিন বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্যও। টাইগারদের ওয়ানডে অধিনায়ক তামিম ইকবাল অন্তত তেমনটাই মনে করছেন। বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপে ফরচুন বরিশালকে নেতৃত্ব দেবেন তামিম, তাই প্রাণের বন্ধু সাকিবের ফেরার ম্যাচে মাঠে থাকবেন তিনিও। হোক না প্রতিপক্ষ, সাকিবের ফেরার আনন্দ ছুঁয়ে যাচ্ছে তামিমকেও।
সোমবার সাকিব যখন অনুশীলন শুরুর প্রস্তুতি নিচ্ছিলেন, সংবাদমাধ্যমের মুখোমুখি হয়ে তামিম তখন বলছিলেন, ‘আমি নিশ্চিত, ওর জন্য এটি অনেক বড় দিন। এক বছর পর মাঠে ফিরছে। ওর জন্য বড় দিন, বাংলাদেশের ক্রিকেটের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ দিন। কারণ, ওর মাপের ক্রিকেটার ফিরে এসেছে। আমি নিশ্চিত ওর ভক্তরা ওকে দেখার জন্য মুখিয়ে থাকবে।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘যেহেতু আমার জন্য এটা একটা খেলা, আমি চেষ্টা করব যাতে ও যত কম প্রভাব ফেলতে পারে। তবে দিনশেষে আমি খুশি যে ও ফিরছে। আমি নিশ্চিত, ও কালকে (আজ) থেকে আরও ভালোভাবে এগিয়ে যাবে।’
তামিম আজ যার সঙ্গে টস করবেন, খুলনার সেই অধিনায়ক মাহমুদউল্লাহ অনুশীলন শুরুর আগে কথা বললেন সাকিবের ফেরা নিয়ে, ‘আমরা সবাই জানি সাকিবের গুরুত্ব কতটুকু, সেটা আন্তর্জাতিক ক্ষেত্রে হোক কিংবা ঘরোয়াতে। অবশ্যই আমরা সবাই খুশি যে ও ফিরছে এবং আমাদের দলেই খেলছে। ওকে পাওয়া দারুণ ব্যাপার।’ সঙ্গে যোগ করলেন, ‘আমি বিশ^াস করি, ও প্রথম ম্যাচেই নিজেকে মেলে ধরতে পারবে। কোনো জড়তা দেখছি না। মনে হচ্ছে যে ও খুব উদগ্রীব খেলার জন্য, মুখিয়ে আছে ভালো খেলতে।’
সাকিব, তামিম, মাহমুদউল্লাহরা মাঠে নামার আগেই বঙ্গবন্ধু টি-টোয়েন্টি কাপের প্রথম ম্যাচটা খেলে ফেলবেন মুশফিক। ম্যাচপূর্ব সংবাদ সম্মেলনে বেক্সিমকো ঢাকার এই অধিনায়কও কথা বলেছেন সাকিবের ফেরা নিয়ে, ‘এটা তো অবশ্যই একটা বড় বিষয়। কেবল আমি না, আমার মনে হয়, পুরো বিশ^ ক্রিকেটই অপেক্ষা করছে। সে এক নাম্বার অলরাউন্ডার, আমাদের শীর্ষ ক্রিকেটার। আশা করছি, আমাদের বিপক্ষে ছাড়া যাতে অন্য সবার সঙ্গে ভালো খেলে।’
সাকিবের ফেরাটাকে একটু ভিন্ন দৃষ্টিকোণ থেকেও দেখতে চাইছেন মুশফিক। বললেন, ‘আমার মনে হয়, পুরো টুর্নামেন্টের জন্যই এটা বড় একটা পাওয়া। তার সঙ্গে এবং বিপক্ষে তরুণ যারা খেলবে, তারা অনেক কিছু শিখতে পারবে। এটা ভবিষ্যতে খুব কাজে দেবে। যেহেতু এবার কোনো বিদেশি খেলোয়াড় নেই, তাই স্থানীয় ক্রিকেটারদের জন্য এটা ভালো সুযোগÑ তার সঙ্গে অনেক কিছু ভাগাভাগি করার এবং অনেক কিছু শেখার।’
এখন এটাই দেখারÑ তরুণরা সেই সুযোগ কতটা কাজে লাগাতে পারেন, ফেরার মঞ্চটাকে সাকিবই-বা কতটা রাঙিয়ে তুলতে পারেন।