মানবতা যেন কেড়ে নিলো এই বৈশ্বিক মাহামারী করোনা। আর নিবেই বা না কেন? এটি যে ছোঁয়াচে এক ভাইরাস। সুস্থ হওয়ার পাশাপাশি মৃত্যু ঝুঁকিও রয়েছে এই করোনায়। তাই বলে মানবতা তো একেবারেই শেষ হয়ে যায়নি। কেউ না কেউ তো রয়েছেন করোনাকে জয় করার মত মানবতাকে জয় করার। এমনই এক মানবতার দৃষ্টান্ত স্থাপন করেছেন পুলিশ কনস্টেবল রুবেল মিয়া।
গাজীপুর মহানগরের গাছা থানাধীন সড়কের সাইনবোর্ড কাচা বাজারের সামনে ঢাকা-ময়মনসিংহ সড়কের রাস্তার পশ্চিম পাশে গত শুক্রবার দিবাগত রাত আনুমানিক রাত ২ টার দিকে দীর্ঘ সময় ধরে পড়েছিল এক অজ্ঞাত নামা (৬২) বৃদ্ধের লাশ।
ওই বৃদ্ধের পরনে সাদা রংয়ের হাফ শার্ট, লুঙ্গি ও মাথায় সাদা রঙের টুপি ছিল। তখনও রাস্তা দিয়ে অনেক মানুষের চলাচল করছিল। করোনা আক্রান্ত রোগী ভেবে ভয়ে কাছে আসেনি কেউ। বৃদ্ধের লাশ দেখে ধারেকাছে দিয়েও যাচ্ছিল না সাধারণ মানুষ।
অনেকক্ষণ ধরে তার নিথর দেহ রাস্তার পাশে পড়ে থাকলেও করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে মারা গেছেন সন্দেহে কেউ তার পাশে যায়নি। খবর পেয়ে গাছা থানার টহলরত পুলিশ কনস্টেবল রুবেল আসে ঘটনাস্থলে।
এসময় মৃতদেহটি থানায় নেয়ার জন্য কোন যানবাহন পাচ্ছিল না। করোনা আক্রান্ত মৃত ভেবে কোন যানবাহনও এগিয়ে আসেনি। আসেনি কোনো ভ্যানচালকও। এমনকি লাশ ধরতেও কোন লোক এগিয়ে আসেনি।
পরে নিজে একাই ওই বৃদ্ধের লাশ একটি ভ্যানে উঠিয়ে, নিজে ভ্যান চালিয়ে থানায় নিয়ে আসেন মানবতার ফেরিওয়ালা পুলিশ কনস্টেবল মোঃ রুবেল মিয়া।
ঘটনাটি গাজীপুরে বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছে। সে দায়িত্ববোধ থেকে যেটুকু করেছেন এতটুকুই আজকাল কেউ তা করছেন না। আবার কেউ কেউ বলছেন, পুলিশ তো আর তার দায়িত্ব এড়াতে পারে না। দায়িত্ববোধ থেকে তিনি যা করেছেন তা প্রশংসার দাবি রাখে।
পুলিশ কনস্টেবল রুবেল জানান, রাত গভীর হওয়ায় বৃদ্ধের দেহটি বহন করার জন্য কোনো গাড়ি পাচ্ছিলেন না তিনি।
এ সময় এক রিকশা-ভ্যান চালককে লাশটি থানায় নেওয়ার অনুরোধ করেন। তবে সেই চালকও তার ভ্যানে লাশটি না তুলতে আমাদের হাতে-পায়ে ধরেন। পরে নিজেই ভ্যানটিতে লাশটি তুলে চালিয়ে থানায় নিয়ে যাই। বৃদ্ধে দেহ তিনি রক্তাক্ত দেখেছেন। তার ধারণা অজ্ঞাত কোনো গাড়ি ওই ব্যক্তিকে চাপা দিয়েছে।
গাছা থানার ওসি ইসমাইল হোসেন বলেন, নিহতের পরিচয় পাওয়া যায়নি। এ সংক্রান্তে থানায় এজাহার দায়ের করা হয়েছে এবং আইনানুগ প্রক্রিয়া চলমান রয়েছে। লাশ ময়না তদন্তের জন্য শনিবার সকালে শহীদ তাজউদ্দীন আহমদ মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে পাঠানো হয়েছে।
উল্ল্যেখ্য, গত ৭ মে বৃহস্পতিবার গাজীপুরের চান্দনা চৌরাস্তায় ইউসুফ নামে এক পরিবহণ শ্রমিকের লাশ পড়েছিল রাস্তায়। তখনও করোনা আক্রান্ত রোগী ভেবে এগিয়ে আসেনি কেউ। পরে দীর্ঘ সময় পর খবর পেয়ে বাসন থানা পুলিশ ওই লাশ উদ্ধার করে দাফন প্রক্রিয়া সম্পন্ন করে। এ বিষয়ে “সময়ের আলো”তে সংবাদ প্রকাশের পর বেশ প্রশংসা কুড়িয়েছিল পুলিশ।